সঠিক খাবারে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সিয়াম পালনের গুরুত্বপূর্ণ টিপস

সিয়াম

 

সঠিক খাবারে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সিয়াম পালনের গুরুত্বপূর্ণ টিপস।

 

সংযম আর সাধনার এক অপূর্ব সমন্বয় পবিত্র মাহে রমজান আসন্ন। পবিত্র রমজান মাসে আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের বেশকিছু পরিবর্তন ঘটে। দৃশ্যমান পরিবর্তন হয় খাবারের ক্ষেত্রে। প্রকৃতপক্ষে রমজানে আমাদের খাদ্যাভ্যাস হওয়া উচিত খুবই সাধারন এবং আমাদের প্রাত্যহিক খাদ্যাভ্যাসের সাথে এটির খুব একটা পার্থক্য থাকা উচিত নয়। রমজানেও কিন্তু আমরা তিন বেলাই খাচ্ছি। আমরা যদি এভাবে ভাবি যে সেহরি আমাদের সকালের প্রাতঃরাশ, ইফতারি হল সন্ধ্যার নাস্তা এবং সাথে রাতের খাবার তো  থাকছেই। রমজানে সাধারনত যেটা হয় তা হল আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালরি নিয়ে থাকি, অনেকে আবার হয়তো খাবার কম খাই, কিন্তু যেটা খাচ্ছি সেটা ক্যালরি আধিক্য। তাই আমরা যদি সেহরি এবং ইফতারের খাবার নির্বাচনে সতর্ক না থাকি তাহলে কিন্তু কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি হয় পাশাপাশি ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছেই।

নিউট্রিশনিস্ট শবনম মোস্তফা এর পক্ষ থেকে সঠিক খাবারে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সিয়াম পালন এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ  টিপস :

সঠিক খাবারে সেহরিঃ

সেহরি খাবার মানে হল কর্মশক্তি পূর্ণ দিনের শুরু। সুতরাং সেহরিটি এমন খাবারের হতে হবে যেন তা আমাদের শরীরের যথাযথ পুষ্টি ও পানিশূন্যতা পূরণ করতে সহায়তা করে এবং এর পাশাপাশি সারাদিনে রোজা রাখার পর্যাপ্ত শক্তি প্রদান করে। সেহরিতে থাকতে হবে হালকা এবং জটিল শর্করা জাতীয় খাবার। সেহরিতে ভাত রাখতে পারেন নিশ্চিন্তে; সাথে শাক সবজি এবং মাছ মাংস রাখা চাই সেহরির মেন্যুতে। বিকল্প হিসাবে আমরা যদি সেহরিতে ওটমিল সাথে দুধ এবং শুষ্কফল খাই; সেটি অনেক বেশি পুষ্টিকর এবং শক্তিদায়ক হবে।এই খাবারটি আমাদের ফাইবার, ফোলেট, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টি অক্সিডেণ্ট পাশাপাশি সারাদিন রোজা রাখার শক্তি সরবরাহ করে।

 স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারঃ

সারাদিনের রোজার পর সবসময়ে ইফতার শুরু করা উচিত সরল শর্করা জাতীয় খাবার দিয়ে এবং এক্ষেত্রে খেজুর/খুরমার বিকল্প নেই। এরপর আসা যাক শরীরে পানির চাহিদা নিয়ে। আসলে রোজায় পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বাজারের কেনা শরবত অথবা জুসের পরিবর্তে আমরা যদি ডাবের পানি কিংবা কোন ঘরে তৈরি মিল্ক-সেক পান করি সেটি অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত হবে। মিল্ক-সেক তৈরির ক্ষেত্রে চিনির পরিবর্তে মধু ব্যবহার করলে সেটি অনেক বেশি পুষ্টিকর হবে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে সারাদিন রোজার পর প্রোটিনের উৎস হিসেবে আমরা একটি সিদ্ধ ডিম/ডিমের সালাদ/ছোলার সালাদ নিতে পারি। পাশাপাশি  দুধের তৈরি কোন ডেসার্ট থাকলে সেটি কিন্তু প্রোটিনের পাশাপাশি ক্যালসিয়ামের চাহিদাও পূরণ করবে। তবে দুধের তৈরি ডেসার্ট এ আমরা অবশ্যই কনডেন্সড মিল্ক এড়িয়ে যাব। এর সাথে আমাদের ভিটামিন/মিনারেলএর চাহিদা পূরণের জন্য একবাটি ফ্রূট ককটেলই যথেষ্ট।

আনতে হবে কিছু স্বাস্থ্যকর পরিবর্তনঃ

  • ইফতারে তেলে ভাজা খাবার খাওয়াতো আমাদের ট্র্যাডিশন হয়ে গেছে। এটি স্থুলাকায় হবার অন্যতম প্রধান কারন এবং পরের দিনের রোজার অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য দায়ী। আমরা যদি আমাদের রমজান রেসিপি একটু অন্যভাবে তৈরি করি যেমন যদি অনেক ভাজা-পোড়ার পরিবর্তে বেকিং/স্টিমিং/গ্রিলিং করি, তাহলে খাবারটি অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত হয় এবং নিউট্রিয়েণ্ট ঘাটতি কম হয়।
  • সারাদিন না খাওয়ার কারনে পাকস্থলির এসিড নিঃসরণ বেড়ে যায়। যার ফলে ব্যাথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। ইফতার এবং রাতের খাবারে অবশ্যই অতিরিক্ত ফাইবার জাতীয় খাবার থাকতে হবে যা এই এসিডকে প্রতিরোধ করে ব্যাথাকে কমিয়ে দেয়। মনে রাখতে হবে কেবল মাত্র পর্যাপ্ত ফাইবার গ্রহন করলেই হবে না পাশাপাশি প্রচুর পানি খেতে হবে।
  • যেহেতু রমজানে সারাদিন আমরা চা/কফি কিংবা তামাকজাতীয় দ্রব্য নেই না; সুতরাং যারা এটাতে অভ্যস্ত তাদের এক্ষেত্রে মাথা-ব্যাথা হতে পারে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে, পানিস্বল্পতা কিংবা ক্ষুধার কারনেও মাথা-ব্যাথা হতে পারে; অর্থাৎ এই মাথা-ব্যাথা থেকে পরিত্রানের জন্য সর্বোপরি একটা সুস্বাস্থ্যময় রোজা উপভোগের জন্য আমাদেরকে রোজা শুরুর অন্তত ১ সপ্তাহ আগে থেকে ক্যাফেইন/তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমাতে হবে। রমজানে ক্যাফেইনেটেড পানীয় যেমন চা, কফি পরিহার করতে হবে। এর পরিবর্তে গ্রিন টি/ হারবাল চা নেওয়া যেতে পারে।
  • অনেকেই রোজার দিনে ঘুমিয়ে/অলস সময় কাটাতে পছন্দ করে। এটি একদমই ঠিক নয়। রোজার দিনে ও কিন্তু আমাদের প্রাত্যহিক শরীরচর্চার কথা ভুললে চলবে না।

আসলে সুস্থতার সাথে রমজান পালন করতে আমাদের দৈনন্দিন রুটিনকে একটি নিয়মের মাঝে নিয়ে আসতে হবে, একটু পুনঃবিনস্ত করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবারে সেহরি এবং ইফতার করতে হবে। তাহলেই রমজানের অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যগত সমস্যা এড়ানো সম্ভব হবে।

সুস্বাস্থ্য কামনায়

 

শবনম মোস্তফা

(এম ফিল নিউট্রিশন এন্ড ফুড সাইন্স, ঢা বি)

বিশেষ প্রশিক্ষণ (মালয়েশিয়া)

নিউট্রিশন কন্সালটেন্ট

শিওরসেল মেডিক্যাল [বিডি] লিঃ

Related posts

3 Thoughts to “সঠিক খাবারে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সিয়াম পালনের গুরুত্বপূর্ণ টিপস”

  1. Hi there colleagues, how iss the whole thing, and whzt yyou wish for to say regarding thius article, in my view its genuinely amazing in favor of me.

  2. I am extremely impressedd with your writing skills and also with
    the layout on your weblog. Is this a paid theme or did you customize it yourself?
    Either way keep up the excellent quality writing, it’s rare to
    see a nice blog like this one nowadays.

Leave a Comment